ঊনকোটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান
হিন্দু পুরানের এই নামকরণের কাহিনীতে কথিত আছে যে কালু কামার নামে একজন স্থাপত্যকার ছিলেন, সেই সাথে দেবী পার্বতীর ভক্ত ছিলেন। একবার দেবী-মহাদেবের সাথে কৈলাসে যাচ্ছিলেন তখন কালু কামার বায়না ধরলেন তাকে যেন তাদের সঙ্গে নেন। তখন মহাদেব উনার উপর শর্ত আরোপ করে বলেন উনি যেতে পারেন তবে তার জন্য তাকে এক রাত্রির মধ্যে এককোটি দেবদেবীর মূর্তি তৈরী করে দিতে হবে। কিন্তু কালু কামার এককোটি থেকে একটি কম মানে ঊনকোটি টি মূর্তি তৈরী করে দিতে সক্ষম হন।
ঊনকোটির মুর্তিগুলি নিয়ে একাধিক কাহিনি প্রচলিত আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর একটি কাহিনি আছে, যার কেন্দ্রীয় চরিত্র হল মহাদেব। দেবাদিদেব শিব একবার দেবতাদের নিয়ে ত্রিপুরার উপর দিয়ে বারানসী যাচ্ছিলেন। মহাদেবকে নিয়ে দেবতাদের সংখ্যা ছিল এক কোটি। সন্ধ্যে নামার পর রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হয় এই রঘুনন্দন পাহাড়ে। পথপরিশ্রমে ক্লান্ত দেবতারা গভীর নিদ্রায় অচেতন হলেন। পরেরদিন সূর্যোদয় হওয়ার আগে সবার বারানসীর উদ্দেশে যাত্রা করার কথা, কিন্তু মহাদেব ছাড়া অন্য কোনো দেবতাদের নিদ্রাভঙ্গ হল না। মহাদেব বিরক্ত হয়ে একাই বারানসীর উদ্দেশে রওনা দিলেন। গভীর নিদ্রায় সমাধিস্থ দেবতাদের কালনিদ্রা আর ভাঙ্গল না এবং তারা অনন্তকালের জন্য পাথর হয়ে রইলেন। এই দেবতাদের সংখ্যা ছিল এক কম কোটি তাই ঊনকোটি। সেই থেকেই এই রঘুনন্দন পাহাড় হয়ে গেল শৈবতীর্থ ঊনকোটি।
পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা মূর্তিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জটাধারী শিব এবং ৩০ ফুট উঁচু কালভৈরবের মূর্তি। এছাড়া গণেশ, দুর্গা, বিষ্ণু, রাম, রাবণ, হনুমান এবং শিবের বাহন নন্দীর মূর্তি। ঊনকোটির একটি প্রধান দ্রষ্টব্য হল গণেশকুন্ড। কুন্ড সংলগ্ন পাথরের দেওয়ালে দক্ষ হাতে খোদাই করা আছে তিনটি গণেশ মূর্তি। এদের ডান পাশে রয়েছে চতুর্ভুজ বিষ্ণু মূর্তি। ঐতিহাসিকদের মতে, ঊনকোটির অভিনব ভাস্কর্য তৈরী হয়েছিল অষ্টম বা নবম শতাব্দীতে।
শিবরাত্রি, মকর সংক্রন্তি এবং অশোকাষ্টমী মেলা উনকোটির বিখ্যাত উৎসব। প্রতি বছর মার্চ / এপ্রিল মাসে উনকোটি তীর্থে অশোকাষ্টমী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এই মেলা অনেক আড়ম্বরের সাথে অনুষ্ঠিত হয়।
কিভাবে পৌছব:
আকাশ পথে
দেশের বিভিন্ন গুরুত্ত্বপূর্ণ শহরগুলোর সাথে রাজধানী আগরতলার প্রতিদিন বিমান যোগাযোগ আছে। আগরতলা ও কৈলাশহরের মধ্যে প্রতিদিন বাস যাতায়াত করে, দূরত্ব ১৭৮ কিমি। নিকটবর্তী রেল স্টেশন কুমারঘাট জেলা সদর থেকে ২৬ কিমি দূরত্বে। গৌহাটি, শিলঙ, শিলচর এবং ত্রিপুরার অন্যান শহরগুলোর সাথে নিয়মিত বাস যোগাযোগ আছে। কৈলাশহর থেকে ঊনকোটির জন্য বাস, অটোরিকসা ও ছোট গাড়ী পাওয়া যায়। শহর থেকে এই স্থানটির দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। পার্শবর্তী উত্তর ত্রিপুরা জেলা সদর ধর্মনগর থেকে এই স্থানটির দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার।
ট্রেন দ্বারা
নিকটবর্তী রেল স্টেশন কুমারঘাট জেলা সদর থেকে ২৬ কিমি দূরত্বে। কুমারঘাট থেকে কৈলাশহরের জন্য বাস, অটো ও অন্যান্য ছোট গাড়ি নিয়মিত পাওয়া যায়। কৈলাশহর থেকে ঊনকোটির জন্য বাস, অটোরিকসা ও ছোট গাড়ী পাওয়া যায়। শহর থেকে এই স্থানটির দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। পার্শবর্তী উত্তর ত্রিপুরা জেলা সদর ধর্মনগর থেকে এই স্থানটির দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার।
রাস্তা দ্বারা
গৌহাটি, শিলঙ, শিলচর, আগরতলা এবং ত্রিপুরার অন্যান শহরগুলোর সাথে কৈলাশহরের নিয়মিত বাস যোগাযোগ আছে। কৈলাশহর থেকে ঊনকোটির জন্য বাস,অটোরিকসা ও ছোট গাড়ী পাওয়া যায়। শহর থেকে এই স্থানটির দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। পার্শবর্তী উত্তর ত্রিপুরা জেলা সদর ধর্মনগর থেকে এই স্থানটির দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার।